ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি ঢাকা বিভাগের ও জেলার প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল অঞ্চলে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শহর। ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি; ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ। জনসংখ্যার বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। ঢাকা শহর “মসজিদের শহর” নামেও সুপরিচিত। এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্যকেন্দ্র। ঢাকা শহরে প্রচুর আধুনিক ও মানসম্মত হাসপাতাল রয়েছে, তন্মধ্য হতে সেরা ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।
আসুন আমরা ঢাকার সেরা ১০ টি বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে জেনে নিই।
স্কয়ার হাসপাতাল, এটি ঢাকার পান্থপথে অবস্থিত। এটি একটি বেসরকারি হাসপাতাল। এখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রুগীদের সেবা করা হয় । ইহার ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট তিনটি বহুতল ভবন রয়েছে। স্কয়ার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয় ২০০৬ সালে। এই হাসপাতালটি তার সাশ্রয়ী মূল্যের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার জন্য অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয়। এই হাসপাতালে আন্তর্জাতিক এবং বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞ এবং দক্ষ ডাক্তার রয়েছেন । এই হাসপাতাল বিভিন্ন ধরণের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে। এটি বাংলাদেশের সেরা ১০টি হাসপাতালের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।
এভারকেয়ার হাসপাতাল, বাংলাদেশের অন্যতম অত্যাধুনিক হাসপাতাল। এই হাসপাতালের পূর্ব নাম ছিল অ্যাপোলো হাসপাতাল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৫ সালে । ২০২০ সালে, হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করে এভারকেয়ার হাসপাতাল রাখা হয়। এর অবস্থান ঢাকা শহরের বসুন্ধরাতে। এই হাসপাতালে ৪৫০ শয্যা এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছে। এখানে বিশ্বমানের অপারেশন থিয়েটার রয়েছে এবং প্যারামেডিক স্টাফ সবসময় পাওয়া যায়। এখানে শহর, গ্রাম থেকে মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য আসে। এটি ঢাকা শহরের সেরা ১০টি হাসপাতালের তালিকার মধ্যে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে।
ইউনাইটেড হাসপাতাল, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল। ইউনাইটেড হাসপাতালটি মূলত কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল, ১৯৮০ দশকে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৪ সালে কন্টিনেন্টাল হাসপাতালটি মালিকানা বদল হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল নামে পরিচিতি পায়। এই হাসপাতালটি ৫০০ শয্যার বহন ক্ষমতা রাখে। তারা জনগণকে পূর্ণাঙ্গ এবং ওয়ানস্টপ হেলথ কেয়ার সল্যুশন সরবরাহ করে। সমগ্র বাংলাদেশে প্রথমবারের মত এই হাসপাতালটি ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার চালু করেছে । এই হাসপাতালটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ হাসপাতালগুলোর একটি।
ল্যাব এইড স্পেশালাইজেড হাসপাতাল, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা শিল্পের মধ্যে একটি জনপ্রিয় নাম। এই হাসপাতালটি স্থাপিত হয় ২০০৪ সালে । ল্যাব এইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল বাংলাদেশে হৃদরোগের চিকিৎসায় অনন্য বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই হাসপাতালটি অত্যাধুনিক মানের অপারেশন এবং ডায়াগনস্টিক সুবিধা প্রদান করে। প্রতিনিয়ত দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং কর্মকর্তাগণ কো-অপারেট করেন। এটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। এখানে ১০টি মডার্ন অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। এখানে বহিঃবিভাগের রোগীদেরও সুবিধা রয়েছে।
বারডেম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ইন ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইন এন্ড মেটাবলিক ডিসঅর্ডার), বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত এবং বিখ্যাত হাসপাতাল । ঢাকার শাহবাগ চত্বরে এর অবস্থান। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৮০ সালে। বারডেম জেনারেল হাসপাতাল একটি ৬০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল কমপ্লেক্স। তাছাড়া প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগী বাইরে থেকে চিকিৎসা সেবা নেন। এটি বিভিন্ন ধরণের ডায়াবেটিস রোগীকে উন্নতমানের সেবা দিয়ে আসছে। এই হাসপাতালটি ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় সবচেয়ে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়াও, এটি ডায়াবেটিস সংক্রান্ত বিষয়ে WHO এর সহযোগিতা কেন্দ্র হিসাবে মনোনীত।
ইবনে সিনা হাসপাতাল, এটি ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চিকিৎসা প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে, ইবনে সিনা হাসপাতাল মেডিসিনের ক্ষেত্রে (অভ্যন্তরীণ, নিউরো, নেফ্রো, গ্যাস্ট্রো-লিভার, কার্ডিয়াক, অনকো, এন্ডোক্রাইন ইত্যাদি) ক্ষেত্রে তার সেবা প্রদান করে আসছে। সাশ্রয়ী মূল্যে ডায়ালাইসিস ইউনিটের মাধ্যমে বহু সংখ্যক কিডনি রোগীকে পরিষেবা দিয়ে আসছে , যা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত এবং একটি ডেডিকেটেড মেডিকেল টিম দ্বারা সমর্থিত। ইবনে সিনা হাসপাতালে 8টি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার রয়েছে, যেখানে অপারেশনকে আরও কার্যকর করার জন্য সি-আর্ম, অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ সরবরাহ করা হয়েছে।
আসগর আলী হাসপাতাল, বাংলাদেশের সেরা হাসপাতাল। এটি ঢাকার গেন্ডারিয়ায় অবস্থিত, একটি ৩৫০ শয্যা বিশিষ্ট মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি টারশিয়ারি-কেয়ার হাসপাতাল। এটি ‘সিটি গ্রুপ(www.citygroup.com.bd)এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান।১৯৭২ সালে যাত্রা শুরু করে এবং চার দশকের ব্যবধানে এটি একটি বৃহত্তম শিল্প ও বাণিজ্যিক আইকন হিসেবে বিকশিত হয়। আসগর আলী হাসপাতাল অত্যাধুনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে, যা দেশ-বিদেশের সুনামধন্য চিকিৎসক, দক্ষ নার্স এবং প্রকৌশলীদের দ্বারা পরিচালিত হয়। হাসপাতালটির মূল লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক মানের সাশ্রয়ী মূল্যের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা।
বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল, এখানে একটি বিশ্বমানের হাসপাতালের সমস্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কেননা এটি বিস্তৃত পরিষেবা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও অত্যাধুনিকমানের চিকিৎসা সরঞ্জাম সমৃদ্ধ একটি হাসপাতাল। হাসপাতালটি আইসিটি(ICT) বিভাগের অগ্রগতির একটি প্রদর্শনী। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের দক্ষ নার্স, টেকনিশিয়ান এবং এডমিনিস্ট্রেটরগণ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এটি একটি জনপ্রিয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এটি একটি ৫০০+ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, বাংলাদেশে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে এটি শীর্ষস্থানীয়। এটি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বোচ্চ সেবার মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির অঙ্গীকারের মাধ্যমে উৎকর্ষতা অর্জন করেছে। পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পপুলার গ্রুপের একটি উদ্যোগ, যা দেশের শীর্ষস্থানীয় মেডিকেল বিজনেস গ্রুপ। এখানে সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
মনোয়ারা হসপিটাল(প্রা.) লিমিটেড, এটি ঢাকা শহরের একটি মাল্টি -হসপিটাল সার্ভিস সমৃদ্ধ হাসপাতাল। এই হাসপাতালের সার্জিক্যাল বিভাগে আধুনিক এবং উন্নতমানের তিনটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। এগুলো ল্যাপারোস্কোপিক এবং এন্ডোস্কোপিক প্রক্রিয়া সহ সমস্ত ধরণের সার্জারির জন্য উপযুক্ত। এই হাসপাতাল এ নন-প্রাইভেট, প্রাইভেট এবং ডিলাক্স রুম এর সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এ রুমগুলোতে নার্স কল সিস্টেম, টিভি, টেলিফোন এবং অক্সিজেন সিস্টেমের সুবিধা রয়েছে। এটি ঢাকার জনপ্রিয় হাসপাতালগুলোর একটি।