খুলনা হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগের দশটি জেলার বিভাগীয় সদর দপ্তর। এটি খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় শহর। ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরের পরে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নগর। এটি বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলার মধ্যে অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা, ভৈরব এবং ময়ুর নদীর তীর জুড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ব্যস্ততম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা নদী বন্দর অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনাকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়। ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রাপ্ত পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন খুলনা জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত। খুলনাকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এই শহরে অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের অনেক হাসপাতাল রয়েছে , তন্মধ্য হতে এখানে সেরা ১০টি হাসপাতাল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
আসুন আমরা খুলনার সেরা ১০ হাসপাতাল সম্পর্কে জেনে নিই।
শহীদ শেখ আবু-নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল খুলনা, এটি একটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। খুলনা শহরের প্রবেশদ্বারে অবস্থিত একটি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট Multidisciplinary tertiary level(মাল্টিডিসিপ্লিনারি টারশিয়ারি লেভেল) হাসপাতাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাইয়ের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যিনি শেখ আবু-নাসেরের ভাতিজি। এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হল, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণকে এক ছাতার নিচে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা।
খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল, একটি বেসরকারী, অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ১৯৭৬ সালে জাতীয় অন্ধত্ব প্রতিরোধ কর্মসূচিতে অবদান রাখার লক্ষ্যে স্থাপিত হয়েছিল, কারণ ছানি অন্ধত্ব বিশ্বব্যাপী একটি রোগ এবং বাংলাদেশে ও অন্ধত্বের প্রধান কারণ হিসাবে এটি বিবেচিত হয়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সরকারের একার পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সামর্থ্যের বাইরে ছিল। পরিস্থিতির গভীরতা অনুধাবন করে একদল সহৃদয় মানুষ এগিয়ে এসেছেন খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে, সরকারী প্রচেষ্টার পরিপূরক এবং হত দরিদ্র মানুষের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করার লক্ষ্যে। এটি একটি নিবন্ধিত বিশ্বস্ত হাসপাতাল, এছাড়াও সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ এবং এনজিও বিষয়ক ব্যুরোতে এটি নিবন্ধিত।
আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল খুলনা,এটি খুলনার সবচেয়ে বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর একটি। হাসপাতালটি খুলনা সিটি বাইপাস এর বৈকালীতে অবস্থিত। এটি আদ-দীন আকিজ ফাউন্ডেশন এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটি খুলনা বিভাগের ভিতর সেরা হাসপাতাল। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে চমৎকার ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালটি সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্যভাবে জনপ্রিয়। দিবা রাত্রি ২৪ ঘন্টা ইমার্জেন্সি বিভাগে সব ধরণের রুগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এটি খুলনার শীর্ষস্থানীয় একটি হাসপাতাল। এই হাসপাতালে স্বনামধন্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ রয়েছেন । অত্যাধুনিক মানের অপারেশন থিয়েটার এর ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বস্তরের মানুষ এখানে গ্রাম ও শহর থেকে উচ্চমানের চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। সকল ডাক্তার এবং নার্স অত্যন্ত অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। তাই, এটি খুলনার শীর্ষ হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি।
নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতাল (প্রাঃ) লিঃ, খুলনার টপ ১০ টি হসপিটালের মধ্যে এটি অন্যতম হাসপাতাল। এটি খুলনার মধ্যে একটি উন্নতমানের প্রাইভেট হাসপাতাল ,খুলনা সেন্ট্রাল রোডে হাসপাতালটি অবস্থিত। নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সদের দ্বারা হাসপাতাল টি পরিচালিত। এখানে সব ধরণের চিকিৎসা ও অপারেশন সেবা প্রদান করা হয়। উক্ত হাসপাতালে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে রুগীদের সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতাল টি খুলনায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের দিক দিয়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থলে, শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর আগের নাম ছিল খুলনা সার্জিক্যাল অ্যান্ড মেডিকেল হাসপাতাল। ২০১১ সালে, হাসপাতালটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরিণত হয়। এখন এটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল। হাসপাতালের মূল লক্ষ্য হলো দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ব্যাপকভাবে, ওয়ান -স্টপ হেলথ কেয়ার সল্যুশন প্রদান করা। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩০০ জনেরও বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া হয়। এখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ডায়াগনস্টিক সার্ভিস, অপারেশন সার্ভিস, ডায়ালাইসিস সার্ভিস এবং রেডিওথেরাপি সার্ভিস। এটি খুলনার একটি জনপ্রিয় হাসপাতাল।
বাংলাদেশ আই হাসপাতাল খুলনা , বাংলাদেশে চক্ষু পরিচর্যা খাতের দ্রুত বিকাশের সাথে সাথে চক্ষু সংক্রান্ত সকল রোগের চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ ধরণের হাসপাতালের খুবই প্রয়োজন ছিল। এ লক্ষ্য মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ আই হসপিটাল লিমিটেড ১৮ ই সেপ্টেম্বর ২০০৫-এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জাতিকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিশ্বমানের আই কেয়ার সার্ভিস প্রদানের লক্ষ্যে। তাদের বাংলাদশে অনেক শাখা রয়েছে। এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি চক্ষু হাসপাতাল।
ডক্টর’স পয়েন্ট স্পেশালাইজড হাসপাতাল, এখানে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সকল প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। হাসপাতালটি সর্বদা রোগীর স্বার্থে কাজ করে। নিবিড় যত্ন এবং চমৎকার স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সর্বনিম্ন খরচের মধ্যে কার্যকরী চিকিৎসা প্রদানে হাসপাতালটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি খুলনার অন্যতম সেরা হাসপাতাল । কেননা হাসপাতাল টি ভালো সুযোগ-সুবিধা ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত একটি আধুনিক হাসপাতাল।
ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল খুলনা, খুলনার একটি বৃহত্তম এবং দ্রুত অগ্রশীল হাসপাতাল। হাসপাতালটি ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একটি ৮০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। এটি বিশ্বাস যুগ্য যে , হাসপাতালটি খুলনার একটি অগ্রগামী বেসরকারি হাসপাতাল হিসেবে এগিয়ে যাবে। হাসপাতালটি নিজস্ব ভবনে তার দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে ১টি আই ও টি(IOT) সহ ৩টি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে।
প্রিন্স হাসপাতাল, এটি খুলনা, রয়েল মোরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত প্রিন্স হাসপাতাল মানসম্পন্ন সেবার ব্যাপারে আপোস করেনি এবং বেসরকারী চিকিৎসা সেবায় অন্যতম সেরা হাসপাতাল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রোগীকে সর্বোত্তম সেবা দিতে তাদের পেশাদার স্বাস্থ্যসেবক দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি আউটডোর এবং ইনডোর দুই ধরনের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান করছে। রোগীর জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসা সেবা দেওয়াই হাসপাতালটির মূল উদ্দেশ্য।