- সরকারি হাসপাতালে যে অপরিচিত লোকটি আপনার ঘনিষ্ট হিসাবে ডাক্তারকে পরিচয় দিবে, হতে পারে সে লোকটি একজন দালাল। শুরুতেই মার্ক করে রাখুন। এড়িয়ে চলুন। তাতে টাকা, সম্মান ও রোগী তিনটাই বাঁচবে।
- জরুরী বিভাগ থেকে ভর্তির পর কাগজটি নিজ হাতে বহন করে নিজের ওয়ার্ডে যাবার অভ্যাস করুন। নতুবা বহনকারী লোকটি আপনাকে বড়সড় খরচ করিয়ে শুইয়ে দিতে পারে।
- কাটা-ফাটা রোগীর ঔষুধ কিনে আনলে খেয়াল রাখুন আপনার কেনা এন্টিবায়োটিক, পেইন কিলার ও সুতা দিয়েই আপনার রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এন্টিবায়োটিক ও সুতার দাম পাঁচ শতাধিক টাকা থেকে শুরু হয়। এগুলো চোরদের লক্ষ্যবস্তু।
- ডিউটি ডাক্তাররা (ইন্টার্ন বা ইউনিটের সিএ, রেজিস্টার) উচ্চশিক্ষিত ও হাইলি কোয়ালিফাইড। সেখানে গিয়ে নিজের ক্ষমতা, শিক্ষাগতযোগ্যতা, স্মার্টনেসের প্রমাণ দিতে যাবেন না। মনে রাখবেন, তাঁরা দক্ষ ও আপনার চেয়েও বেশি মানবিক। আপনি যতটুকু ভদ্র হবেন, তাঁরা তার চাইতে বেশি ভদ্রলোকের মত আপনাকে চিকিৎসা দিবে।
- হাসপাতালের সব সিরিয়াস রোগীর চিকিৎসা শুরু হয় ইন্টার্ন/সিএ/ রেজিস্ট্রারের হাত দিয়েই। তাঁরা জানে কিভাবে রোগীকে দ্রুত সময়ে প্রাণরক্ষাকারী চিকিৎসা দিতে হয়। বড় স্যার কবে দেখবে, কেন এখন ও ডাক্তার আসছে না বলে বোকামীর পরিচয় দিবেন না।
- শুক্রবার বা বিশেষ সরকারি ছুটির দিন হাসপাতালের সাধারণ রাউন্ড বন্ধ থাকে। এসময় ডাক্তার নাই, ডাক্তার দেখেন নি বলে কাউকে বিব্রত করবেন না।
- হাসপাতাল থেকে সাপ্লাইকৃত ঔষধ ডাক্তারগণ দিবেন না । সংশ্লিষ্ট ঔষধের জন্য নার্স বা ইনচার্জকে ভদ্র ভাষায় বলুন। আপনার রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ঔষধটি তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহকৃত নাও থাকতে পারে বা সরকারিভাবে বরাদ্দ নাও থাকতে পারে, না থাকলে আপনাকেই বাহির থেকে কিনতে হবে।
- রোগীর পাশ থেকে আপনার সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে ফেলুন। তারা রোগীর কোন কল্যাণে আসবে না। তাদের জন্য চিকিৎসা দেরি হয়, এমনকি রোগী মারা ও যেতে পারে। যত মানুষ কম তত রোগীর সুস্থ্য হবার সম্ভাবনা বেশি।
- সরকারি হাসপাতালে বেড এর জন্য অবসেসিভ(ঘ্যানঘ্যান) হবেন না। এখানে কেউ বেড দখল করে শুয়ে থাকেনা। সবাই অসুস্থ রোগী। সেখানে মুচি ডোম শুয়ে থাকলেও তাকে নামিয়ে আপনাকে উঠানো যাবেনা। বেড না থাকলে একজন ডাক্তারের মা নিজে অসুস্থ হয়ে আসলেও তাকে মেঝেতেই থাকতে হবে। সকল রোগী সমান। বেড ও মেঝের সবাইকে সমান চিকিৎসা দেওয়া হয়।
- কোন বিশেষ ক্ষমতাধর গোষ্ঠির পরিচয় দেবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন, ঝামেলা এড়ানোর জন্য সকল ডাক্তার ঐ রোগীর কাছে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। দিনশেষে ক্ষতিটা আপনারই।
- রোগী খাবে কী... বলে বারবার বিরক্ত করবেন না। যদি স্যালাইন চলে তাহলে ভেবে নিন তাকে আলাদা করে খাওয়াতে হবেনা। খাবার বন্ধ রাখা হয় রোগীর ভালোর জন্যই। কিছুক্ষণ না খেলে আপনার রোগী মারা যাবেনা।
- ক্যানুলা খুলে গেছে, স্যালাইন অফ কেন, ঔষধ কখন খাবে, কিভাবে খাবে, ঔষধটা চেক করে দিন তো.... এই প্রশ্নগুলো নার্সকে ভদ্র ভাষায় জিজ্ঞাসা করুন। সাধারণত এগুলো তাদের দায়িত্ব। তারা শিক্ষিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাদের সম্মান করুন।
- যেকোন পুরুষ ডাক্তারকে সুন্দর স্বাভাবিক কন্ঠে 'স্যার' বা ডক্টর ও মহিলা ডাক্তারকে 'ম্যাম/ম্যাডাম' বা ডক্টর বলে সম্বোধন করা যায়। একইভাবে মহিলা ও পুরুষ নার্সকে সিস্টার-ব্রাদার, আয়া বা কর্মচারীদের মামা ও খালা হিসাবে সম্বোধন করা যায়। এগুলো আপনাকে ছোট করবে না বরং সম্মান বাড়িয়ে দিবে ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরাও আপনাকে মিষ্টি ভাষায় সাহায্য করবে।
- কেউ আপনার টাকা, ফোন ইত্যাদি হাতিয়ে নিলে তার চেহারা সুরৎ চিনে রাখুন। নিকটস্থ থানায় গিয়ে বলুন। পুলিশ অনেক বেশিই সহায়তা করে। শুধু সাহস করে বলুন।
- হাসপাতাল বিশাল জায়গা। কোন অন্ধকার করিডোর বা চিপা এড়িয়ে চলুন।
- থুথু ফেলার জায়গা না থাকলে মাঝে মধ্যে গিলার অভ্যাস করুন। আপনি হাসপাতাল যতটুকু নোংরা করবেন, বাকি সবাই আপনার ফেলানো থুথু দেখে সেখানে থুথু ফেলে ভাসিয়ে।দিবে। অপরাধের শুরুটা কিন্তু আপনিই করলেন।
- সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের উপর আস্থা রাখুন। আপনি শুধুই লাভবান হবেন। কারণ সেবার বিনিমিয়ে ডাক্তাররা এক পয়সাও পকেটে ঢুকাবে না।
- রোগী মারা গেলে ডাক্তারকে গালিগালাজ না করে স্ব স্ব ধর্মের সৃষ্টিকর্তার কাছে অভিযোগ করুন। ডাক্তার একজন মানুষ। তিনি চেষ্টা করেছেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আপনার রোগীর সুস্থতা চাননি।
Dr. Zainal Abedin Jewel
MBBS, BCS (Health), MD Cardiology, FCPS Medicine